বিকাশের বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগ

 


মোবাইলে আর্থিক সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান বিকাশের বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগ উঠেছে। বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন আর্জেন্টিনা ফুটবল দলের আঞ্চলিক স্পন্সর হওয়ার প্রক্রিয়ায় প্রতিষ্ঠানটি এই মানি লন্ডারিং করেছে বলে মনে করে এ সংক্রান্ত কেন্দ্রীয় সংস্থা।


আর্জেন্টাইন ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের (এএফএ) সঙ্গে বিকাশের চুক্তি নিয়ে তদন্ত এবং সম্প্রতি প্রতিষ্ঠানটির ঢাকার অফিস পরিদর্শনের পর এই মতামত দিয়েছে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) অধীনস্থ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টিগ্রিটি অ্যান্ড কাস্টমার সার্ভিসেস ডিপার্টমেন্ট (এফআইসিএসডি)। বাংলাদেশ ব্যাংকের আওতাধীন এফআইসিএসডি এক প্রতিবেদনে এ বিষয়ে অধিকতর তদন্তের প্রস্তাব করেছে।


প্রতিবেদনে এফআইসিএসডি বলছে, বিকাশ লিমিটেড আর্জেন্টিনা ফুটবল দলের সঙ্গে তাদের ব্র্যান্ড পার্টনারশিপের চুক্তি করতে গিয়ে যে অনিয়ম করেছে তা ফরেন এক্সচেঞ্জ রেগুলেশন অ্যাক্ট-১৯৭৪ এর সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। একই সঙ্গে বিকাশের বিরুদ্ধে কেন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না, এ বিষয়ে কারণ দর্শানো নোটিশ দেওয়ার পাশাপাশি বিএফআইইউকে আরও অধিকতর তদন্তের সুপারিশ করেছে।


জানা গেছে, আর্জেন্টিনা ২০২২ সালে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর গত বছরের মে মাসে বিকাশ বাংলাদেশে দলটির আঞ্চলিক স্পন্সরশিপের ঘোষণা দেয়। এই ঘোষণার পর বিকাশের পক্ষ থেকে তখন ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা চালানো হয়। প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে তখন স্পন্সরশিপের অর্থের অঙ্ক প্রকাশ না করলেও পরে জানা যায় এক্ষেত্রে ৪ লাখ ১০ হাজার ডলার লেনদেন হয়েছে। এই অর্থ বাংলাদেশ থেকে পাঠানো হয়নি এবং লেনদেনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের কোনো অনুমোদনও নেই। ডলার পরিশোধের জন্য বিকাশের পক্ষ থেকে গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে আবেদন করা হয়। তবে ডলার সংকট এবং সাম্প্রতিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনায় তাদের আবেদন মার্চে প্রত্যাখ্যান করে বাংলাদেশ ব্যাংক।


কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিনিধি দল এ বিষয়ে তদন্ত করে জানতে পারে বিকাশ লিমিটেডের কোনো একটি বিদেশি বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান বিকাশের নামে ‘উপহার’ হিসাবে আর্জেন্টিনা ফুটবল ফেডারেশনকে ৪ লাখ ১০ হাজার ডলার পরিশোধ করেছে।


এফআইসিএসডি বলছে, এমন লেনদেন সন্দেহের উদ্রেক করে। বিদেশি অংশীদার এভাবে উপহারস্বরূপ বিকাশের পক্ষে চুক্তিমূল্য পরিশোধ করতে পারে কিনা তা অধিকতর যাচাই-বাছাই প্রয়োজন বলে মনে করে সংস্থাটি। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, অনুমোদনের বাইরে এমন লেনদেন সম্পূর্ণ বেআইনি ও অবৈধ। সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, বিদেশ থেকে ডলার পরিশোধের ফলে দেশে সরকার একদিকে ভ্যাট-ট্যাক্সের আয় থেকে বঞ্চিত হয়েছে। অন্যদিকে বিদেশি অংশীদারদের ডলার দেশের ভেতরে না আসায় দেশের বৈদেশিক লেনদেন ভারসাম্য খানিকটা হলেও নষ্ট হয়েছে। বিশ্লেষকদের মতে, ‘উপহার’ বলা হলেও এটি আসলে পরবর্তীতে কোনো না কোনো সময় বিকাশে বিদেশি অংশীদারের বিনিয়োগ হিসাবে দেখানো হবে। এর মাধ্যমে দেশের ভেতরে ডলার না এসেও দেশে ডলারের বিনিয়োগ দেখানো হবে। এটি আসলে মানি লন্ডারিং বা হুন্ডিরই একটা ধরন।