বিসিবি’র বোর্ড সভা পাপনের শেষ ফারুকের শুরুর অপেক্ষা



আজ বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) ভাগ্য নির্ধারণ! আজ বিসিবি’র কার্যনির্বাহী কমিটির সভায় শেষ হতে পারে নাজমুল হাসান পাপনের অধ্যায়। এই সভাতে তিনি অংশ নিবেন ভার্চ্যুয়ালি। সরকার পতনের পর তিনি রয়েছেন আত্মগোপনে। এরমধ্যে সংসদ ভেঙে দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি। যে কারণে পাপন এখন এমপিও নেই, এমনকি শেষ হয়েছে তার ক্রীড়ামন্ত্রীর অধ্যায়। আজ তিনি ইতি টানতে পারেন বিসিবি’র সঙ্গে ১২ বছরের সম্পর্কও। যদি তাই হয় তাহলে দেশের ক্রিকেটের অভিভাবক সংস্থায় আসবেন নতুন সভাপতি। এরমধ্যে একজনের নাম নিয়ে শুরু হয়েছে জোর গুঞ্জন। তিনি দেশের সাবেক অধিনায়ক ফারুক আহমেদ। যে কিনা ২০১৬ তে প্রধান নির্বাচক পদ থেকে পদত্যাগ করেছিলেন।


এরইমধ্যে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ (এনএসসি) থেকে মনোনীত হয়ে বিসিবি’র পরিচালক হয়েছেন ফারুক। পাপনকে সভাপতি পদ থেকে সরতে হলে আগে পরিচালক পদ থেকে পদত্যাগ করতে হবে। এরপর ফারুককে বাকি পরিচালকরা সভাপতি নির্বাচিত করতে পারবেন। বিসিবি’র গঠনতন্ত্র অনুসারে এটাই হওয়ার কথা। এনএসসি বর্তমান বোর্ডে তাদের মনোনীত পরিচালক জালাল ইউনুসের পদত্যাগপত্র পেয়েছে। আর স্বেচ্ছায় পদত্যাগ না করায় আহমেদ সাজ্জাদুল আলম ববিকে প্রত্যাহার করে নিবে এনএসসি। তাদের দু’জনের পরিবর্তে ফারুক ছাড়াও আরেক নাম রয়েছে দেশের অভিজ্ঞ কোচ নাজমুল আবেদিন ফাহিমের। 


গতকাল সন্ধ্যায় ফারুক আহমেদের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘আসলে আমি এখনো পরিচালক হিসেবে চিঠি পাইনি। তাই কাল (আজ) বোর্ড মিটিংয়ে অংশ নিবো কিনা তাও জানি না। যদি সেটি হয় তবেই না আমি ভাববো যে সেখানে কি করবো আমি। আর সভাপতি হওয়ার বিষয়টা বারবারই আসছে। কিন্তু তার আগে আমাকে পরিচালক হতে হবে। এরপর আমাকে পরিচালকদের মাধ্যমে নির্বাচিত হতে হবে। অনেক প্রক্রিয়া। তাই বিসিবি কীভাবে চলবে বা কারা পরিচালনা করবে তা কালকে (আজ) বোর্ড সভা না হওয়ার আগ পর্যন্ত কিছুই বলা যাচ্ছে না।’ অন্যদিকে একই সুরে কথা বলেছেন নাজমুল আবেদিন ফাহিমও। তিনি বলেন, ‘না এখনো পরিচালক হিসেবে কোনো চিঠি পাইনি। পাওয়ার পর ভাববো কি করা যায়।’ টানা ১৪ বছর ধরে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের অভিভাবক ছিলেন নাজমুল হাসান পাপন। ২০১২ তে আইসিসি’র সভাপতি হয়ে আ হ ম মোস্তাফা কামাল বিসিবি থেকে দায়িত্ব ছাড়েন। এরপরই নাজমুল হাসান সরকার থেকে মনোনীত হয়ে বিসিবি’র সভাপতির দায়িত্ব নেন। এরপর বোর্ড ভেঙে দিয়ে তিনি হন অ্যাডহক কমিটির প্রধান। ২০১৩ থেকে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিলের নিয়ম করে দেয় ক্রিকেট বোর্ডের সভাপতি ও পরিচালক হতে হবে নির্বাচিত সরকার মনোনীত নয়। সেখান থেকে নির্বাচক করে নাজমুল হাসান নির্বাচিত সভাপতি হিসেবে যাত্রা শুরু করেন। তার পর থেকে বিসিবি’র গঠনতন্ত্রেও আনতে শুরু করেন নানা পরিবর্তন। সংশোধিত যে গঠনতন্ত্র সেখানে বিসিবি সভাপতির পদ কীভাবে বিলুপ্ত হবে তা নিয়ে কোনো স্পষ্ট নির্দেশনা দেয়া নেই। যে কারণে পাপনকে আগে পরিচালক পদ থেকে সরে যেতে হবে। এখন দেখার বিষয় আজ বোর্ড সভাতেতিনি কি সিদ্ধান্ত নেন! 


পাপনসহ বেশ কয়েকজন আত্মগোপনে থাকায় ক্রিকেট পরিচালনা করতে বিসিবিকে পড়তে হচ্ছে বড় বাধার মুখে। এমন পরিস্থিতিতে ক্রিকেটকে বাঁচাতে আজ বোর্ড সভা ডেকেছেন বিসিবি’র প্রধান নির্বাহী নিজামুদ্দিন সুজন। সরকার পরিবর্তনের পর যা বিসিবি’র প্রথম আলোচনা সভা, এতে উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে বিসিবি’র সকল পরিচালককে। এবারের বোর্ড সভা অবশ্য মিরপুর শেরেবাংলা মাঠে বিসিবি কার্যালয়ে নয়, অনুষ্ঠিত হবে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের (এনএসসি) সভাকক্ষে। যেখানে থাকবেন নাজমুল হাসান পাপনও। যদিও সশরীরে নয়, অনলাইনে উপস্থিতি জানান দেবেন তিনি। সকাল ১১টায় শুরু হওয়ার কথা রয়েছে এই সভা। যদি সবকিছু ঠিক থাকে তাহলে ক্রিকেটের এগিয়ে যাওয়ার স্বার্থের কথা ভেবেই হয়তো নাজমুল হাসান বিদায় বলতে পারেন! তার বিদায়ের পর নতুন সভাপতি নির্বাচিত হলে বদলাতে শুরু করবে বিসিবি’র অন্য পরিচালকদের ভাগ্যও। যারা সাবেক সরকার ও নাজমুল হাসান পাপনের ঘনিষ্ঠজন তাদেরও বিদায় নিতে হবে বিসিবি থেকে। এই ভাবেই চলবে বিসিবি’র পুনর্গঠন প্রক্রিয়া।