৮ দিন পর লাশ পাওয়া যায় মামুনের



৫ আগস্ট পতন হয় শেখ হাসিনার সরকারের। ওই দিন বিকেলে বেসরকারি চাকরিজীবী মো. আল মামুন আমানত বাসা থেকে বের হন। এরপর থেকে নিখোঁজ ছিলেন তিনি। অবশেষে আট দিন পর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে তার গুলিবিদ্ধ লাশ খুঁজে পায় পরিবার।


কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার ধামঘর ইউনিয়নের কৃষ্ণপুর গ্রামের মৃত লতিফ সরকারের ছেলে মো. আল মামুন আমানত। নারায়ণগঞ্জে একটি বায়িং হাউসে চাকরি করতেন। শহরের জালকুঁড়ি এলাকায় স্ত্রী ও দুই মেয়েকে নিয়ে ভাড়া বাসায় থাকতেন। ৫ আগস্ট মিছিলে যোগ দিতে গিয়ে গুলিতে যাত্রাবাড়ী এলাকায় নিহত হন আল মামুন।


আল মামুনের স্ত্রী হাসিনা মমতাজ গণমাধ্যমে বলেন, ৫ আগস্ট বিকেলে মামুন বাসা থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পর তিনি দুই মেয়েকে নিয়ে তার বোনের বাড়িতে বেড়াতে যান। এরপর থেকে মামুনকে মোবাইলে ফোন দিয়েও পাননি। পরদিন দুপুর দেড়টায় দিকে অফিস থেকে মামুনের এক সহকর্মী ফোনে জানান, মামুন অফিসে যাননি। এরপর পরিবারের সদস্য ও স্বজনেরা মামুনের খোঁজে নেমে পড়েন।


স্বামীকে খুঁজতে গিয়ে প্রতারকের খপ্পরেও পড়তে হয়েছে হাসিনা মমতাজকে। তিনি বলেন, আত্মীয়স্বজনেরা মিলে ঢাকার সব হাসপাতালে খোঁজেন আল মামুনকে। কোথাও পাননি। ৭ আগস্ট সকালে একজন ফোন করে বলেন, তিনি তার স্বামীর সন্ধান দিতে পারবেন। বিনিময়ে টাকা দিতে হবে। এ প্রান্ত থেকে হাসিনা মমতাজ বলেন, তার স্বামীর ছবি পাঠালে তারপর টাকা দেবেন। এ কথা বললে ওই লোক তার স্বামীর নম্বর দিয়ে কল করেন। বিশ্বাস হয় হাসিনা মমতাজের। তিনি ৩০ হাজার টাকা পাঠান।


হাসিনা মমতাজ বলেন, পরে আরেক ব্যক্তি হাইওয়ে পুলিশ পরিচয়ে জানান যে তার স্বামীকে ফেনীতে নেয়া হচ্ছে। তিনি অসুস্থ। চিকিৎসার খরচ দিতে হবে। এ কথা শোনার পর আরও সাড়ে ৮ হাজার টাকা পাঠান। শুধু তা–ই নয়, পরিবারের কয়েকজন মিলে ফেনীর উদ্দেশে রওনা দেন। ফেনীতে গিয়ে বুঝতে পারেন, তারা প্রতারকের খপ্পরে পড়েছেন। হতাশ হয়ে আবার ঢাকায় ফেরেন।


নিহতের স্ত্রী হাসিনা মমতাজ বলেন, ১৩ আগস্ট টিভিতে দেখেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের হিমঘরে এখনো বেওয়ারিশ ৮টি লাশ পড়ে আছে। এ তথ্য জানার পর আল মামুনের খালা রিনা আক্তার তার স্বামীকে নিয়ে যান ঢাকা মেডিকেলের মর্গে। সেখানে গিয়ে আল মামুনের লাশ দেখতে পান। পরে খবর পেয়ে হাসিনা মমতাজ স্বামীর লাশ শনাক্ত করেন। তার স্বামীর শরীর বুলেটবিদ্ধ ছিল। নাকের ডান পাশ ও গাল একেবারে থেঁতলানো ছিল। এতে তাকে চেনা যায়নি। পরে সেখানে ময়নাতদন্ত হয়।


নিহত আল মামুনের চাচাতো ভাই শাহিন সরকার গণমাধ্যমে বলেন, মোটরসাইকেল নিয়ে আনন্দ মিছিলে গিয়ে যাত্রাবাড়ী এলাকায় গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান মামুন। তার মাথার অংশ থেঁতলানো ছিল। অনেক খোঁজাখুঁজি করে ১৪ আগস্ট ঢাকা মেডিকেলের মর্গ থেকে বেওয়ারিশ হিসেবে রাখা লাশের মধ্য থেকে তার মরদেহ শনাক্ত করা হয়।